দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক উপপরিচালক আবু বকর সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ইউরো ও ডলারে ঘুষ গ্রহণের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। তিনি সহকর্মীদের কাছে ‘জিনের বাদশা’ নামে পরিচিত ছিলেন। আবু বকরের বিরুদ্ধে তদন্তে উঠে এসেছে, তিনি দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের থেকে ঘুষের বিনিময়ে দায়মুক্তি দিতেন। বিশেষ করে ডলার ও ইউরোর মাধ্যমে ঘুষ গ্রহণ করতেন। তার এই অবৈধ কর্মকাণ্ডের পেছনে ছিল রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা।
আবু বকর সিদ্দিক তার কর্মজীবন শুরু করেন দুর্নীতি দমন ব্যুরোর স্টেনোগ্রাফার হিসেবে। ধীরে ধীরে পদোন্নতি পেয়ে তিনি দুদকের উপপরিচালক হন। তবে তার এই পদোন্নতির পেছনেও দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রভাব কাজ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তদন্তে জানা গেছে, আবু বকর তার ঘুষের টাকাগুলো হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাঠাতেন, বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে যেখানে তার দুই ছেলে বসবাস করেন। পরে সেই টাকা আবার 'রেমিট্যান্স' হিসেবে দেশে ফেরত আসত।
২০২৩ সালের এপ্রিলে ঢাকার কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট এ কে এম শামসুজ্জামানের গ্রেপ্তারের পর আবু বকর সিদ্দিকের ঘুষ-বাণিজ্যের চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশিত হয়। শামসুজ্জামান জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তার বিরুদ্ধে থাকা দুদকের মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে পরিবর্তন করার বিনিময়ে আবু বকর ৬০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। নগদ টাকা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়ে আবু বকর টাকা ডলারে রূপান্তরিত করে দিতে বলেন। এরপর শামসুজ্জামান বাধ্য হয়ে ডলারে ৬০ লাখ টাকার সমপরিমাণ অর্থ প্রদান করেন।
আবু বকরের সহকর্মীরা জানান, তিনি দুদকের তদবির বাণিজ্য সিন্ডিকেটের একজন অন্যতম হোতা ছিলেন। ঘুষের বিনিময়ে দুর্নীতিবাজদের মামলা থেকে রেহাই দিতেন এবং তাদের মামলা মুকুব করতেন। এছাড়াও, তিনি বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে চিঠি ইস্যু করে ব্ল্যাকমেইল করতেন এবং টাকা আদায় করতেন।
আবু বকর সিদ্দিকের অবৈধ সম্পদের পরিমাণও চমকপ্রদ। তদন্তে জানা গেছে, তার নামে রাজধানীর অভিজাত এলাকায় বেশ কয়েকটি প্লট ও ভবন রয়েছে। পূর্বাচলে ১০ কাঠা জমির পাশাপাশি মুগদায় একটি ১০ তলা ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। এছাড়াও বনশ্রী, আফতাবনগর, উত্তর বাড্ডাসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ডজন খানেক ফ্ল্যাট রয়েছে। জামালপুরেও তার বিপুল সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছে, শামসুজ্জামানের মামলায় তদন্ত কর্মকর্তাকে পরিবর্তন করার বিনিময়ে আবু বকর ৬০ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন এবং শামসুজ্জামানকে মামলা থেকে দায়মুক্তি দিতে সহায়তা করেন। এ ঘটনায় আবু বকরের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুদক, এবং ইতোমধ্যে একজন পরিচালককে এই বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনা প্রকাশের পর আবু বকর সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ ও দুর্নীতির ব্যাপক তথ্য বেরিয়ে আসছে।