ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক তোফাজ্জলকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে হলটির প্রভোস্ট অধ্যাপক শাহ মুহাম্মদ মাসুমসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলাটি গত ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আক্তারুজ্জামানের আদালতে তোফাজ্জলের ফুফাতো বোন মোসা. আসমা আক্তার দাখিল করেন।
মামলার সূত্রে জানা যায়, ১৮ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ৮টার দিকে তোফাজ্জল ফজলুল হক মুসলিম হলের গেটে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র তাকে আটক করে হলের মূল ভবনের গেস্ট রুমে নিয়ে যান এবং মোবাইল চুরির অভিযোগে ওই যুবককে নির্যাতন শুরু করেন। তোফাজ্জল তাদের জানায় তার নাম তোফাজ্জল, এবং পরে কিছু শিক্ষার্থী তার মানসিক সমস্যা বুঝতে পেরে তাকে ক্যান্টিনে নিয়ে খাবার খেতে দেন।
কিন্তু এরপর তাকে আবার গেস্ট রুমে নিয়ে জানালার সঙ্গে হাত বেঁধে স্ট্যাম্প, হকিস্টিক ও লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়। মারধরের ফলে তোফাজ্জল অচেতন হয়ে পড়লে তাকে রাত ১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়, যেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এরপর ১৯ সেপ্টেম্বর শাহবাগ থানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের সুপারভাইজার মোহাম্মদ আমানুল্লাহ মামলা দায়ের করেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তায় অভিযুক্ত ৬ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
২০ সেপ্টেম্বর, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম গ্রেপ্তারকৃত শিক্ষার্থীদের আদালতে হাজির করেন। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা আদালতে স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন, যা রেকর্ড করা হয়। আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
গ্রেপ্তারকৃত শিক্ষার্থীরা হলেন:
- মো. জালাল মিয়া (সাবেক উপ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ)
- সুমন মিয়া (মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ বিভাগ)
- মো. মোত্তাকিন সাকিন (পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট)
- আহসান উল্লাহ (গণিত বিভাগ)
- আল হসাইন সাজ্জাদ (জিওগ্রাফি)
- ওয়াজিবুল আলম (অজ্ঞাত বিভাগের ছাত্র)
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক প্রতিবাদের সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তা এবং মানবাধিকার সংরক্ষণের দাবিতে সোচ্চার হয়েছে। ঘটনাটি মানসিক স্বাস্থ্য এবং সহিংসতা বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার জন্ম দিয়েছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশে কার্যকর পরিবর্তন আনার জন্য একটি অনুরোধ জানাচ্ছে।
এখন তদন্ত কার্যক্রম চলমান, এবং আগের মামলার তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর নতুন মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম শুরু হবে। আইনজীবী নাজমুল হাসান জানিয়েছেন যে আদালত বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করে অভিযোগটি আমলে নিয়েছে, তবে পূর্ববর্তী মামলার তদন্তের ফলাফলের ওপর নতুন মামলাটির ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে।
4o mini