বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন, যিনি সবসময়ই সোশ্যাল মিডিয়ায় তার রাজনৈতিক এবং সামাজিক মতামত নিয়ে সরব থাকেন, সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে তিনি ড. ইউনূসের সঙ্গে তার পূর্বের সাক্ষাৎ এবং দেশে ফেরার বিষয়ে আলোচনা করেছেন। তসলিমা উল্লেখ করেন, তাদের সাক্ষাৎ সম্ভবত ২০০৫ সালে ফ্রান্সের দোভিলে উইমেন'স ফোরামের একটি অনুষ্ঠানে হয়েছিল। সেখানে ড. ইউনূস তাকে দেশে ফেরার আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে তসলিমার নিজের দেশে থাকার অধিকার কেউ কেড়ে নিতে পারে না।
চিঠিতে তসলিমা প্রশ্ন তুলেছেন, ড. ইউনূস সেই সময়ে দেশে ফেরার জন্য কোন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন কি না এবং এখন, যেহেতু তিনি দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত, তিনি কি সেই একই আহ্বান পুনর্বার দেবেন না। তিনি বলেন, “এখন আপনার হাতেই সব।” তসলিমা নাসরিন আরও উল্লেখ করেন যে ড. ইউনূসের চারপাশের লোকজন ইসলামি মৌলবাদীদের দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে এবং সম্ভবত সে কারণে তিনি তসলিমার দেশে ফেরার পক্ষে সাহসী পদক্ষেপ নিতে চাইছেন না।
তসলিমা তার নির্বাসিত জীবনের কথা উল্লেখ করে বলেন, গত ৩০ বছর ধরে তিনি নির্বাসনে কাটাচ্ছেন এবং তিনি কখনোই দেশের শত্রুদের সঙ্গে আপোস করেননি। সেই তুলনায়, তিনি ড. ইউনূসকে প্রশ্ন করেছেন, তিনি কি নিজের জীবন নিয়ে এমন গর্ব করতে পারবেন?
তসলিমা ১৯৯৪ সালে তার দেশ বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য হন। ইসলামবিরোধী লেখালেখির জন্য তার বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করা হয়েছিল। এরপর তিনি দীর্ঘদিন ইউরোপ এবং আমেরিকায় ছিলেন। ২০০৪ সালে তিনি ভারতে স্থায়ী হন এবং কিছু সময় পশ্চিমবঙ্গে বাস করেছিলেন। কিন্তু পরে তিনি কলকাতাও ছাড়তে বাধ্য হন। বর্তমানে তিনি দিল্লিতে বাস করছেন, কিন্তু তার ভারতে থাকার পারমিট রিনিউ না হওয়ায় তসলিমা উদ্বিগ্ন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, ভারতে থাকার অনুমতি না পেলে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়বেন।
তসলিমা নাসরিন বরাবরই বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং মানবাধিকারের বিষয়ে তার সোচ্চার মতামত প্রকাশ করে আসছেন। তার খোলা চিঠি ড. ইউনূসের প্রতি নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে, বিশেষত বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে, যেখানে ড. ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে আছেন।