স্বাধীন ডেস্ক :
রংপুরে আয়োজিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মতবিনিময় সভায় আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বৈষম্য ও সামগ্রিক উন্নয়ন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য তুলে ধরেছেন। সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরির শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময় সভায় তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে এবং রংপুর বিভাগের দীর্ঘদিনের উন্নয়ন বৈষম্য নিয়ে কথা বলেন।
সারজিস আলম বলেছেন, "আমরা কোনো অথরিটি নই, আমরা প্রেসার গ্রুপ। প্রেসার গ্রুপ হিসেবেই আমাদের কাজ করে যেতে হবে। ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের স্প্রিট ধরে রাখতে হবে, এর জন্য তরুণ সমাজকে বাঁচাতে হবে। মাদকের ছোবল থেকে দূরে থাকতে হবে এবং পড়ালেখায় ফিরতে হবে।" তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন যে, শিক্ষার্থী হিসেবে তাদের মূল অগ্রাধিকার হবে পড়ালেখা। কারণ, যদি দেশকে ১০০ বছর এগিয়ে নিতে হয়, তাহলে দক্ষ ও মানসম্পন্ন জনশক্তি প্রয়োজন। তিনি বলেন, "বাংলাদেশ থেকে ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশে লক্ষ কোটি ডলার বেতন হিসেবে চলে যায়। ওই পদগুলোর জন্য আমাদের প্রস্তুত হতে হবে।"
তিনি আরও বলেন, "আমাদের দেশে সিস্টেমের মাধ্যমে যে ক্যান্সার তৈরি হয়েছে, সেটি নির্মূল করে জনগণের ভোটের মাধ্যমে সরকার প্রতিষ্ঠার দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এজন্য ধৈর্য ধরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সময় দিতে হবে এবং আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।"
রংপুর বিভাগের উন্নয়ন বৈষম্য
রংপুর বিভাগের বাজেট ও উন্নয়ন বৈষম্য নিয়ে সারজিস আলম বিশেষভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, রংপুর বিভাগের বরাদ্দ দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে কমিয়ে রাখা হচ্ছে। তিনি বলেন, "দেশের প্রথম সারির সিটি কর্পোরেশন এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে বাজেট পায়, রংপুর বিভাগ সেই বাজেট পায়নি। এভাবে রংপুর দীর্ঘদিন ধরে বাজেট বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে।"
রংপুরে এখনো একটি প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা সেরা কোনো মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা যায়নি বলেও তিনি আক্ষেপ করেন। তিনি বলেন, "রংপুর বিভাগের উন্নয়নের জন্য আমাদের অধিকার আদায়ে আওয়াজ তুলতে হবে। এখনই আওয়াজ তোলার উত্তম সময়।"
তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন
সারজিস আলম তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়েও কথা বলেন। তিনি দাবি করেন, এই মহাপরিকল্পনা একটি যৌক্তিক দাবি। তিনি বলেন, "তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ১ হাজার কোটি টাকা দরকার। অথচ এই প্রকল্প এখনও বাস্তবায়ন করা হয়নি, যেখানে সরকার পদ্মাসেতু ও পদ্মারেল সেতুর জন্য ৭০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছে। অথচ ১ কোটি মানুষের জন্য তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি।"
তিনি আরও বলেন, রংপুর বিভাগের ৮টি জেলা এখনও ২য় সারির জেলা হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে এবং তাদের বরাদ্দও ২য় সারির বরাদ্দ হিসেবেই দেওয়া হচ্ছে। সারজিস আলম দাবি করেন, "এই বৈষম্য আমরা আর মানি না। আমাদের অধিকার আদায়ের এখনই সময়।"
সারজিস আলমের এই বক্তব্য রংপুরবাসীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে, যেখানে তিনি স্থানীয় উন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের ভূমিকা, এবং জাতীয় স্তরের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের প্রসঙ্গ নিয়ে বক্তব্য রেখেছেন।