যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) সৌদি আরবের যুবরাজ, প্রধানমন্ত্রী ও ডি-ফ্যাক্টো নেতা মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় তহবিল ও ক্ষমতার অপব্যবহারের গুরুতর অভিযোগ এনেছে। বুধবার প্রকাশিত ৯৩ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদনে এসব অভিযোগ তুলে ধরা হয়।
২০১৭ সাল থেকে দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের নামে সৌদির বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও ধনকুবেরদের সম্পত্তি ও কোম্পানি জব্দ করে পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডে (পিআইএফ) অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এই তহবিল বর্তমানে যুবরাজ মোহাম্মদের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে। পিআইএফের সম্পদের পরিমাণ ৮,৪০০ কোটি ডলার থেকে বেড়ে বর্তমানে ৯২,৫০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, "পিআইএফের মাধ্যমে সৌদি যুবরাজ দেশের অর্থনীতিতে অভূতপূর্ব প্রভাব বিস্তার করেছেন। তবে তার এই প্রভাব শেষ পর্যন্ত জনগণের কল্যাণে আসবে কি না, তা নিয়ে গভীর সন্দেহ রয়েছে।"
পিআইএফের আওতাধীন প্রকল্পগুলোতে শ্রমিকদের অধিক সময় কাজ করানো, দুর্ব্যবহার এবং আন্তর্জাতিক শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলা হয়েছে। বিশেষত, নিওম প্রকল্প, যা সৌদি যুবরাজের স্বপ্নের প্রকল্প হিসেবে পরিচিত, সেখানে শ্রমিকদের প্রচণ্ড গরমে কাজ করানো এবং তাদের প্রতি অমানবিক আচরণের ঘটনা সামনে এসেছে।
২০১৭ সালে ক্ষমতায় আসার পর মোহাম্মদ বিন সালমান সৌদি আরবের অর্থনীতিকে জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভরতা থেকে মুক্ত করতে পর্যটন, শিক্ষা ও অন্যান্য খাতকে শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি দেন। এই লক্ষ্যেই নিওমসহ অন্যান্য উচ্চাভিলাষী প্রকল্প চালু করা হয়।
এইচআরডব্লিউ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পিআইএফের সঙ্গে কাজ না করার পরামর্শ দিয়েছে। তাদের মতে, এসব প্রকল্পে কাজ করার মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা শ্রমিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘনে পরোক্ষভাবে অংশীদার হতে পারেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, "এসব প্রকল্পে অংশগ্রহণ করা শুধুমাত্র নৈতিক প্রশ্নই নয়, এটি আন্তর্জাতিক শ্রম আইন ও মানবাধিকারের প্রতি প্রতিশ্রুতির বিরোধীও হতে পারে।"
এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সৌদি যুবরাজের উচ্চাভিলাষী অর্থনৈতিক পরিকল্পনা এবং তার নেতৃত্বের প্রভাব নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে এই রিপোর্ট।