বয়স শুধু সংখ্যা: ৯৩ বছরের সলিমা খানের শিক্ষার প্রতি অদম্য ইচ্ছাশক্তি

Date: 2024-09-28
news-banner

ভারতের উত্তর প্রদেশের ৯৩ বছর বয়সী সলিমা খান এমন এক অনুপ্রেরণার নাম, যিনি প্রমাণ করেছেন যে বয়স কখনোই শিক্ষার জন্য বাধা হতে পারে না। যখন নাতি-নাতনিদের সঙ্গে সময় কাটানোর কথা, তখন তিনি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ক্লাসে বসে নতুন করে পড়াশোনা করছেন। বুলন্দশহরের একটি স্কুলে তাকে দেখা যায় কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের সঙ্গে পড়াশোনা করতে। বয়স এবং শারীরিক দুর্বলতা সত্ত্বেও, সলিমা খান নিজের অপূর্ণ স্বপ্নটিকে পূরণ করতে নতুন করে শুরু করেছেন।

সলিমা খানের ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি গভীর আগ্রহ ছিল। কিন্তু পারিবারিক চাপ, সামাজিক অবস্থা এবং সময়ের অভাবে সেই স্বপ্ন পূরণ করা হয়ে ওঠেনি। সারা জীবন স্বপ্নটাকে দমিয়ে রেখেছিলেন। অবশেষে পরিবারের সহযোগিতায় এবং নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে তিনি স্কুলে ফিরে আসেন।

সলিমা খান তার জীবনের গল্প তুলে ধরে বলেন, "আমি সবসময় শিখতে চাইতাম। পরিবারের লোকজনকে বলতাম। একদিন আমার ভাই পরামর্শ দিলেন, স্কুলে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা কর। শিক্ষকরা তোমাকে শেখাবে। আমি সেই কথা শুনে দারুণ খুশি হয়েছিলাম আর স্কুলে আসি।"

স্কুলে তার উপস্থিতি শুধু তাকে নয়, বরং আশেপাশের সবাইকে অনুপ্রাণিত করে। ক্লাসের ছোটরা তাকে শেখায়, আর তিনিও তাদের জীবনজ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। তার মুখে হাসি ফুটে ওঠে যখন তিনি বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটান। সলিমা খান বলেন, “আমি এই স্কুলের বাচ্চাদের খুব ভালোবাসি। এখানে এসে খুব ভালো লাগে।”

সলিমা খানের শিক্ষার প্রতি আগ্রহ দেখে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ড. প্রতিভা শর্মা তাকে ‘নতুন ভারত সাক্ষরতা মিশন’-এর আওতায় গ্রামের পরিষদের স্কুলে ভর্তি করান। ড. শর্মা বলেন, “সলিমা খানের চোখে ছানি, কানে শুনতে অসুবিধা, কিন্তু তা সত্ত্বেও তার পড়াশোনার ইচ্ছা অসাধারণ। তিনি যেন শিশুর মতো শিখতে পছন্দ করেন, কবিতা আবৃত্তি করতে ভালোবাসেন, আর বাচ্চাদের সঙ্গে মিলে পড়াশোনা করতে আনন্দ পান।”

সলিমা খান যে শুধুমাত্র নিজের জন্য পড়াশোনা করছেন তা নয়, বরং তার প্রতিটি পদক্ষেপে অন্যদের জন্য একটি বড় অনুপ্রেরণা। তিনি বারবার প্রমাণ করছেন যে শেখার কোনো বয়স নেই। তিনি জীবনের শেষ প্রান্তে এসে শিখছেন, হাসছেন, আর স্বপ্ন দেখছেন।

সলিমা খানের এই নতুন যাত্রা তার মতো আরো অনেককে উৎসাহিত করছে, যারা হয়তো কোনো এক সময় জীবনের চাপে নিজেদের স্বপ্নকে ত্যাগ করেছিলেন। সলিমা খানের মতো মানুষগুলোই আমাদের দেখিয়ে দেন, জীবনের যেকোনো মুহূর্তে আবার নতুন করে শুরু করা যায়, যদি মনের জোর এবং ইচ্ছাশক্তি থাকে।

সলিমা খানের জীবনের এই গল্প একটি শিক্ষা দেয় যে শেখার কখনোই দেরি হয় না এবং ইচ্ছাশক্তির জোরে যেকোনো অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়।

Leave Your Comments