দেশের অন্যতম আলোচিত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্স থেকে এবার রেকর্ড পরিমাণ অর্থ উদ্ধার করা হয়েছে। তিন মাস ১৪ দিন পর খোলা মসজিদের ১০টি দানবাক্স ও একটি ট্যাংক থেকে শনিবার (৩০ নভেম্বর) ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা এবং স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া যায়।
শনিবার সকাল ৭টায় মসজিদের দানবাক্স খোলার কাজ শুরু হয়। পরে পাওয়া অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী গণনার জন্য মসজিদের দোতলায় আনা হয়। ৪০০ জনের একটি দল ১০ ঘণ্টা ধরে এই গণনার কাজ সম্পন্ন করেন। গণনার কাজ শেষ হয় সন্ধ্যা ৬টায়।
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিজাবে রহমত গণনা শেষে দানের অর্থের পরিমাণ নিশ্চিত করেছেন। দানবাক্স খোলার সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসান চৌধুরীসহ মসজিদ পরিচালনা কমিটির অন্যান্য সদস্যরা।
এর আগে, গত ২০ এপ্রিল মসজিদের দানবাক্স থেকে ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। আর ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে ৬ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা পাওয়া যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দানের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় মসজিদটি দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
প্রায় আড়াইশো বছরের পুরনো পাগলা মসজিদ নিয়ে রয়েছে নানা জনশ্রুতি। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এই মসজিদে দান করলে এবং মানত করলে মনোবাসনা পূর্ণ হয়। এই বিশ্বাস থেকে মুসলিম-হিন্দু নির্বিশেষে নানা ধর্ম-বর্ণের মানুষ এখানে দান করেন। দান হিসেবে নগদ অর্থ ছাড়াও স্বর্ণালঙ্কার, রুপা, গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি এবং বৈদেশিক মুদ্রাও পাওয়া যায়।
বিশেষত, প্রতি শুক্রবার এবং গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় দিনগুলোতে মসজিদে ভিড় জমায় মানত নিয়ে আসা লোকজন।
পাগলা মসজিদটি কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত। একসময় মাত্র ১০ শতাংশ জমির ওপর স্থাপিত মসজিদটি বর্তমানে ৩ একর ৮৮ শতাংশ জায়গা নিয়ে বিস্তৃত। মসজিদটির খ্যাতি এবং ঐতিহাসিক গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মসজিদের দানের অর্থ বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হয়। জেলার অন্যান্য মসজিদ, মাদরাসা, এতিমখানা এবং চিকিৎসা খাতে এই অর্থ ব্যবহৃত হয়। করোনাকালেও শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্বেচ্ছাসেবকদের সেবায় অনুদান দেওয়া হয়েছিল।
পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটি জানিয়েছেন, মসজিদের আয় থেকে ‘পাগলা মসজিদ ইসলামিক কমপ্লেক্স’ নির্মাণের কাজ দ্রুত শুরু হবে। এ প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। নতুন কমপ্লেক্সে একসঙ্গে ৩০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন।
এই ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মিত হলে এটি দেশের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন ধর্মীয় স্থাপনায় পরিণত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।