অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকার দেশের অর্থনীতি, শাসনব্যবস্থা, আমলাতন্ত্র এবং বিচারব্যবস্থাকে ধ্বংস করে গেছে। নতুন বাংলাদেশ গড়তে অন্তর্বর্তী সরকার পুরোপুরি শূন্য থেকে কাজ শুরু করছে। জাপানি গণমাধ্যম নিক্কেই এশিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সোমবার (২ ডিসেম্বর) তিনি এসব কথা বলেন।
ড. ইউনূস বলেন, নির্বাচনের আগে দেশের অর্থনীতি, সংবিধান, এবং বিচারব্যবস্থায় সংস্কারের জন্য কয়েকটি কমিশন গঠন করা হয়েছে। জানুয়ারির মধ্যে এসব কমিশনের সুপারিশ হাতে পাওয়ার পর সংস্কার বাস্তবায়ন শুরু হবে। তবে সময়সাপেক্ষ এ প্রক্রিয়া শেষ হলে তবেই নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, "নির্বাচনের সময় নির্ভর করছে সংস্কার প্রক্রিয়ার অগ্রগতির ওপর। আমরা গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছি।"
নিজের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, "আমি রাজনীতিবিদ নই এবং রাজনীতি থেকে সবসময় দূরে থেকেছি।" শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামল নিয়ে তিনি বলেন, "হাসিনার শাসনামলে গণতন্ত্র ধ্বংস হয়েছে। ভোটারবিহীন নির্বাচন ও ফ্যাসিবাদী আচরণে তিনি শাসনব্যবস্থা ধ্বংস করে গেছেন।"
তিনি আরও জানান, বিচার প্রক্রিয়া শেষে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত রায় হলে তাকে ভারতের কাছে হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে ভারতের উদ্বেগকে ‘প্রোপাগান্ডা’ বলে উল্লেখ করেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, "সংখ্যালঘু ইস্যুতে যা বলা হচ্ছে, তার বেশিরভাগই ভিত্তিহীন।"
চীনের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে ড. ইউনূস বলেন, "চীন আমাদের বন্ধু। তারা সড়ক, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সমুদ্রবন্দর নির্মাণে সহায়তা করছে।"
রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "এই সংকটের দায় বাংলাদেশ কতদিন বহন করবে? আমাদের একটি অভিন্ন লক্ষ্য ঠিক করতে হবে।"
বাংলাদেশের আসিয়ান সদস্যপদ নিয়ে মালয়েশিয়ার সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে এ বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে।
ড. ইউনূসের মতে, অর্থনীতি ও শাসনব্যবস্থায় সুবিশাল সংস্কার কার্যক্রমের মাধ্যমে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে এ পথ সহজ হবে না বলে সতর্ক করেন তিনি।