জয়পুরহাট হাসপাতালে চিকিৎসকের সঙ্গে যুবদল নেতার হাতাহাতি, দুই ঘণ্টা চিকিৎসাসেবা বন্ধ

Date: 2025-02-02
news-banner

জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. হাবিবুল্লাহ আল মেজবাহ ও জেলা যুবদলের সাবেক সদস্য সচিব মুক্তাদুল হক আদনান-এর মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনার পর বিচারের দাবিতে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতি শুরু করেন, ফলে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা দুই ঘণ্টার বেশি বন্ধ থাকে। পরে প্রশাসন ও পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে এবং দুপুর সোয়া ১২টার দিকে চিকিৎসাসেবা পুনরায় চালু হয়।

হাসপাতাল ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, মুক্তাদুল হক আদনানের স্ত্রী তার শিশুর কপালে ক্ষত নিয়ে চিকিৎসার জন্য সকাল ১০টার দিকে জরুরি বিভাগে যান। সে সময় ডা. হাবিবুল্লাহ আল মেজবাহ শিশুটির কপালে সেলাই দিতে চান। তবে মুক্তাদুল হক আদনান আসবেন বলে তার স্ত্রী কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলেন।

এরপর চিকিৎসক কসমেটিক সেলাই দেওয়ার পরামর্শ দেন এবং জানান, এটি ওটি রুমে করা হবে। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপরই হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেন এবং বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন।

খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক (ডিসি) আফরোজা আকতার চৌধুরী, পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব, সিভিল সার্জন মুহা. রুহুল আমিন ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলজার হোসেন।

সরেজমিনে জানা যায়, ঘটনার পর মুক্তাদুল হক আদনানকে হাসপাতালে আটকে রাখা হয়। এরপর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সরদার রাশেদ মোবারকের কক্ষে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকের সময় হাসপাতালের কর্মরত নার্স, ইন্টার্ন চিকিৎসক ও অন্যান্য স্টাফরা বিচারের দাবিতে স্লোগান দেন। বৈঠক শেষে প্রশাসনের সিদ্ধান্তে মুক্তাদুল হক আদনানকে থানায় নেওয়া হয়।

মুক্তাদুল হক আদনানের স্ত্রীর বক্তব্য তিনি জানান,

"আমার বাচ্চার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে এসেছিলাম। চিকিৎসক কসমেটিক সেলাই, ওটি নিয়ে নানা কথা বলেন। একপর্যায়ে তিনি আমার নখে আঘাত করেন। তখন আমার স্বামী রেগে যান এবং বলেন, ‘স্ত্রীর গায়ে হাত দিলেন কেন?’ তিনি আগে উত্তেজিত হননি। চিকিৎসকের এমন আচরণ কাম্য নয়। যা অভিযোগ করা হচ্ছে, তা মিথ্যা।”

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সরদার রাশেদ মোবারক বলেন,
"ঘটনাটি নিয়ে নিউজ না হোক, এটাই সবাই চায়। অযথা বিশৃঙ্খলা তৈরি না হোক, সেটিই আমাদের লক্ষ্য। তদন্তের মাধ্যমে প্রশাসন যা সিদ্ধান্ত নেবে, সেটিই হবে। ওই চিকিৎসককে আপাতত আলাদা রাখা হয়েছে, যাতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত না হয়।"

জয়পুরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহেদ আল মামুন জানান,
"হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এখনো থানায় কোনো অভিযোগ দায়ের করেনি। যদি অভিযোগ না করা হয়, তাহলে মুক্তাদুল হক আদনানকে ছেড়ে দিতে হবে।"

বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হাসপাতালে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

Leave Your Comments