আবুল খায়ের জসিম উদ্দিন, পেশাদার জীবনে যিনি শুধু জসিম নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন, বাংলা চলচ্চিত্রের জগতে একজন বিশেষ নাম। ১৯৫০ সালে জন্মগ্রহণকারী এই নায়ক ১৯৯৮ সালে ৮ অক্টোবর আমাদের থেকে বিদায় নিলেও তার অবদান আজও স্মরণীয় হয়ে আছে। তিনি শুধুমাত্র একজন সফল অভিনেতাই ছিলেন না, পাশাপাশি তিনি একজন প্রযোজক, ফাইট পরিচালক এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই জসিমের চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে। ১৯৭২ সালে ‘দেবর’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি বাংলা চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন। তবে তার বড় সাফল্য আসে একাধিক অ্যাকশনধর্মী চলচ্চিত্রের মাধ্যমে, যেখানে তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের দর্শকদের সামনে এক নতুন ঘরানার অ্যাকশন কাহিনী উপস্থাপন করেন। অনেকেই তাকে বাংলা চলচ্চিত্রের অ্যাকশনের পথপ্রদর্শক হিসেবে মনে করেন, কারণ তার মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রে অ্যাকশন ধারার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়।
জসিম শুধু একজন বড় অভিনেতাই ছিলেন না, তিনি ছিলেন বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা। দেশকে স্বাধীন করার লড়াইয়ে তার সাহসিকতার জন্য তিনি আজও গর্বের সাথে স্মরণীয়। যুদ্ধের ময়দানে সাহসিকতা প্রদর্শনের পর, তিনি তার দেশপ্রেমের সাক্ষর রেখেছেন বিনোদন জগতেও।
জসিমের অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘রঙ্গীন রূপবান’, ‘রাজ দুলারি’, ‘তুফান’, ‘ডন’, এবং আরও অনেক। তার অভিনয়ের পরিসর যেমন ছিল বহুমুখী, তেমনি তিনি চলচ্চিত্র প্রযোজনার ক্ষেত্রেও অবদান রেখেছেন। মধুমতি ফিল্মস এর সাথে তার কাজগুলো বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়।
জসিম তার কর্মজীবনের পাশাপাশি একজন সফল পরিবার প্রধানও ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুইবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার সন্তানরাও তার পেশাগত উত্তরাধিকার বহন করে চলেছেন।
১৯৯৮ সালে ৮ অক্টোবর জসিমের অকাল মৃত্যু বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তবে তার জীবনের কর্মকাণ্ড তাকে অমর করে রেখেছে, এবং তিনি আজও বাংলা চলচ্চিত্রপ্রেমীদের হৃদয়ে জায়গা করে আছেন।