ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মনির হোসেনের সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও আন্দোলনে নেমেছেন। মনির হোসেন কুষ্টিয়ার কুমারখালি উপজেলার বেল্লাল হোসেনের ছেলে। বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ক্লাস শেষে বাড়ি ফেরার পথে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে যাচ্ছিলেন তিনি। বিকেল পৌনে ৩টার দিকে কুষ্টিয়ার চৌড়হাস এলাকায় সিএনজি ও বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন। স্থানীয় লোকজন দ্রুত তাকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে বিকেল পৌনে ৪টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
মনিরের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই শিক্ষার্থীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়কে অবরোধ শুরু করেন তারা। এতে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কে উভয় দিকে কয়েক কিলোমিটারজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসহ নিহতের সহপাঠীরা এ বিক্ষোভে অংশ নেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলা এ অবরোধে শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক আইন বাস্তবায়নসহ পাঁচ দফা দাবি জানান। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে পাঁচ দফা দাবি পেশ করার পর শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেন।
শিক্ষার্থীরা মনির হোসেনের মৃত্যুতে দায়ীদের বিচার এবং সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছেন। দাবিগুলো হলো:
- সড়ক দুর্ঘটনায় ড্রাইভারসহ দায়ীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা।
- নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা।
- সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত মনির হোসেনের পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান করা।
- ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা।
- কুষ্টিয়া থেকে ঝিনাইদহ পর্যন্ত মহাসড়ক সংস্কার করা।
শিক্ষার্থীরা আরও দাবি জানান যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস শিডিউলে কুমারখালী পর্যন্ত বাসের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া কুমারখালী-খোকসা অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ক্যাম্পাস-পান্টি-কুমারখালী রুটে বাস চালু করা। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিগত ৩০ বছর ধরে এই যৌক্তিক দাবিকে উপেক্ষা করছে।
কুষ্টিয়া হাইওয়ের ওসি আকুল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে তিনটি পূরণের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে। সেগুলো হলো—দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা, নিরাপদ সড়ক এবং ট্রাফিক আইন বাস্তবায়ন। বাকি দুইটি দাবি (ক্ষতিপূরণ এবং সড়ক সংস্কার) সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পূরণ করতে হবে। এ ঘটনায় ট্রাক ও সিএনজি চালকের বিরুদ্ধে কুমারখালি থানায় মামলা (নং ১৯) দায়ের করা হয়েছে, যা সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮-এর ধারা ৯৮/১০৫ অনুসারে করা হয়েছে।
কুষ্টিয়া জেলার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জানান, এখনো তাদের কাছে কোনো ক্ষতিপূরণের আবেদন আসেনি। সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণের বিষয়ে কেউ নিয়ম অনুযায়ী আবেদন জানালে আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিক্ষার্থী সোহানুর রহমান বলেন, মনির হোসেন ছিলেন তার দিনমজুর বাবার আকাশছোঁয়া স্বপ্ন এবং অসুস্থ মায়ের একমাত্র অবলম্বন। সোহানুরের মতে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি—ক্যাম্পাস-পান্টি-কুমারখালী রুটে বাস চালু করতো, তাহলে এ ধরনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা হয়তো এড়ানো যেত।
শিক্ষার্থীদের এ বিক্ষোভ এবং দাবি কেবল একটি সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিক্রিয়া নয়, এটি দীর্ঘদিনের অবহেলার বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। তারা আশা করছেন, প্রশাসন তাদের দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করবে এবং ভবিষ্যতে এমন মর্মান্তিক ঘটনা আর ঘটবে না।