শেখ হাসিনাকে ফেরত দিবে দিল্লি

Date: 2024-09-20
news-banner

স্বাধীন ডেস্ক :

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় গ্রহণ এবং তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে চলমান আলোচনা ও আইনি প্রক্রিয়া বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক ও আইনি ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা গণবিক্ষোভের মুখে পদত্যাগের পর ভারত আশ্রয় নেন, এবং দীর্ঘ সময় ধরে সেখানে অবস্থান করছেন। তার দেশে ফেরার দাবি জোরালো হচ্ছে, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন গুরুতর অভিযোগ ওঠার পর থেকে।

আইনি প্রক্রিয়া এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল

২০১০ সালে শেখ হাসিনা সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (ICT) গঠন করে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যকর করার জন্য। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধসহ বহু অভিযোগের মামলা দায়ের করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান প্রসিকিউটর এই অভিযোগগুলির ভিত্তিতে তাকে দেশে ফেরানোর আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। যদিও তিনি এখনও আদালতে দোষী প্রমাণিত হননি, তবুও তাকে ভারতে থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য এটাই প্রধান আইনি ভিত্তি হিসেবে কাজ করতে পারে।

ভারত-বাংলাদেশ প্রত্যর্পণ চুক্তি

ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে ২০১৩ সালে স্বাক্ষরিত প্রত্যর্পণ চুক্তি এবং ভারতের ১৯৬২ সালের প্রত্যর্পণ আইন শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরানোর জন্য একটি আইনি কাঠামো সরবরাহ করে। চুক্তির ১ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুসারে, উভয় দেশ তাদের অপরাধীদের প্রত্যর্পণ করতে বাধ্য, যদি তারা এক বছরের বেশি কারাদণ্ডের মতো অপরাধে অভিযুক্ত হন। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা এই শর্ত পূরণ করে।

তবে চুক্তির ৬ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক নেতাদের প্রত্যর্পণ করার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম থাকতে পারে। তবুও, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধকে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী রাজনৈতিক অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় না। সেই কারণে চুক্তির এই ধারায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে রাজনৈতিক কারণে প্রত্যাখ্যান করার সুযোগ নেই।

ভারতে প্রত্যর্পণ আইনের ব্যতিক্রম

ভারতের প্রত্যর্পণ আইনেও কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে। চুক্তির ৮(১)(এ)(আইআইআই) ধারায় বলা আছে, যদি একজন ব্যক্তি প্রমাণ করতে পারেন যে তাকে দেশে ফেরালে সুষ্ঠু বিচার হবে না বা তাকে নিপীড়নমূলক অবস্থার মুখোমুখি হতে হবে, তবে তাকে প্রত্যর্পণ না করার সুযোগ রয়েছে। শেখ হাসিনার সমর্থকেরা এই ধারায় নির্ভর করতে পারেন, যুক্তি দিয়ে যে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা দ্বারা প্রভাবিত।

ভারতের কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত

ভারতের জন্য শেখ হাসিনাকে ফেরানো বা তার পাশে দাঁড়ানোর বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত সংবেদনশীল। শেখ হাসিনা দিল্লির দীর্ঘদিনের বন্ধু এবং তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ-ভারতের কৌশলগত সম্পর্ক জোরালো হয়েছে। চুক্তির ২১(৩) ধারায় ভারতের হাতে চুক্তি বাতিলের ক্ষমতা রয়েছে, তবে এটি করলে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।


Leave Your Comments