আজ ১ নভেম্বর, ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলা নাটকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রূপকার দীনবন্ধু মিত্রের প্রয়াণ দিবস। ১৮৭৩ সালের আজকের এই দিনে তিনি চিরতরে বিদায় নিয়েছিলেন। তাঁর অনন্য রচনাসমূহ বাংলা নাটকের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে এবং আজও তিনি নাট্যধারার অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে স্মরণীয়।
মাইকেল মধুসূদন দত্তের সমসাময়িক দীনবন্ধু মিত্র বাংলা নাট্যধারায় একটি বিশেষ বাস্তবধর্মী শৈলীর প্রবর্তন করেন, যা ছিল পৌরাণিক বা ঐতিহাসিক নাট্যের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। তিনি সমাজের নানা অসঙ্গতি ও সমস্যাকে কেন্দ্র করে নাটক রচনা করতেন, যা তখনকার সমাজকে নতুন ভাবনার জগতে উত্তীর্ণ করে।
তাঁর প্রথম নাটক নীলদর্পণ (১৮৬০) ব্রিটিশ শাসনের অধীন নীলচাষের অমানবিকতা ও নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরে দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। পরবর্তীতে নবীন তপস্বিনী (১৮৬৩), সধবার একাদশী এবং বিয়ে পাগলা বুড়ো প্রহসন রচনা করে তিনি বাংলার নাট্যজগতে এক শক্তিশালী স্থান করে নেন। তাঁর সর্বশেষ নাটক কমলে কামিনী প্রকাশিত হয় ১৮৭৩ সালে। এছাড়া দ্বাদশ কবিতা এবং সুরধুনী কাব্য শিরোনামে দুটি কাব্যগ্রন্থও রচনা করেন তিনি।
উত্তর ২৪ পরগণার চৌবেরিয়ায় দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও কলকাতায় এসে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে দীনবন্ধু লেখাপড়া চালিয়ে যান এবং উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে পোস্টমাস্টার পদে নিযুক্ত হয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন এবং ইংরেজ সরকারের পক্ষ থেকে রায়বাহাদুর উপাধি লাভ করেন। তবে লুসাই যুদ্ধে তাঁর অসামান্য কাজের পরেও পদাবনতি এবং অবহেলার শিকার হন।
আর্থিক সংকট এবং বহুমূত্র রোগে আক্রান্ত অবস্থায় ১৮৭৩ সালে আজকের দিনে তিনি প্রয়াত হন।