বাংলাদেশের স্বাধীন ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণে বিপ্লবী ভূমিকা রাখা তারেক মাসুদের জন্মদিনে তাকে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করা হচ্ছে। আজ, ৬ ডিসেম্বর, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসে স্মরণীয় এ ব্যক্তিত্বের ৬৯তম জন্মবার্ষিকী।
১৯৫৬ সালের এই দিনে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার নূরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তারেক মাসুদ। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাণ আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ। তার দক্ষ নির্মাণশৈলী, চিন্তার গভীরতা এবং শিল্পের প্রতি একাগ্রতায় তিনি দেশ-বিদেশে বিপুল খ্যাতি অর্জন করেন।
তারেক মাসুদ ২০০২ সালে নির্মিত তার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র "মাটির ময়না" দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে নতুন পরিচিতি দেন। ছবিটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে ডিরেক্টরস ফোর্টনাইটে প্রদর্শিত হয় এবং এটি প্রথম বাংলাদেশি বাংলা ভাষার চলচ্চিত্র হিসেবে একাডেমি পুরস্কারে সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্রের জন্য মনোনীত হয়।
তার চলচ্চিত্র জীবনের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে "আদম সুরত" (১৯৮৯), "মুক্তির গান" (১৯৯৬), "অন্তর্যাত্রা" (২০০৬), এবং "রানওয়ে" (২০১০)। তার চলচ্চিত্রগুলো বাংলাদেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে দর্শকদের মনে গভীর প্রভাব ফেলেছে।
তারেক মাসুদ শুধু একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা ছিলেন না, তিনি একজন লেখক, গীতিকার এবং বিকল্প ধারার চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সংগঠন শর্ট ফিল্ম ফোরামের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।
চলচ্চিত্র শিল্পে অসামান্য অবদানের জন্য ২০১২ সালে মরণোত্তর একুশে পদক দেওয়া হয় তাকে। তার প্রামাণ্যচিত্র "মুক্তির গান" ১৯তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা প্রামাণ্যচিত্রের পুরস্কার অর্জন করে।
তারেক মাসুদের জীবনসঙ্গী ক্যাথরিন মাসুদ তার কাজে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী ছিলেন। এই দম্পতির একমাত্র সন্তান নিশাদ মাসুদ। ক্যাথরিন মাসুদ এখনো তারেক মাসুদের অসমাপ্ত কাজগুলো এগিয়ে নেওয়ার জন্য কাজ করছেন।
তারেক মাসুদ তার কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন, সৃজনশীলতা ও মানবতার প্রতি গভীর প্রতিশ্রুতি দিয়ে কীভাবে একজন নির্মাতা নিজেকে দেশের ও বিশ্বের মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিতে পারেন। তার জন্মদিনে নতুন প্রজন্মের চলচ্চিত্র নির্মাতারা তার জীবন ও কাজ থেকে অনুপ্রেরণা নিতে পারেন।
আজ তারেক মাসুদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে তার চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।