স্বাধীন ডেস্ক :
বিশ্ব বাঁশ দিবস: বাঁশের সম্ভাবনা ও ঐতিহ্য উদযাপনের এক অনন্য উপলক্ষ
আজ, ১৮ সেপ্টেম্বর, পালিত হচ্ছে বিশ্ব বাঁশ দিবস। বাঁশের অসীম সম্ভাবনা এবং এর বহুমুখী ব্যবহারের গুরুত্বকে তুলে ধরতে প্রতি বছর এই দিনটি বিশ্বজুড়ে পালিত হয়। ২০০৯ সালে ব্যাংককে অনুষ্ঠিত অষ্টম বিশ্ব বাঁশ কংগ্রেসে আনুষ্ঠানিকভাবে এই দিবসের সূচনা হয়। মূলত বাঁশ শিল্পের উন্নয়ন এবং এর সঙ্গে জড়িত লাখ লাখ মানুষের জীবিকার সুযোগ বাড়াতে এই দিবসটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। বিশ্ব বাঁশ দিবসের প্রস্তাব রেখেছিলেন তৎকালীন বিশ্ব বাঁশ সংস্থার (World Bamboo Organization) সভাপতি কামেশ সালাম, যিনি বাঁশের টেকসই ব্যবহার এবং বাঁশের উপর নির্ভরশীল শিল্পের বিকাশে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন।
বাঁশ হলো একটি চিরহরিৎ উদ্ভিদ, যা ঘাস পরিবারের বৃহত্তম সদস্য হিসেবে পরিচিত। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় ১৫০ প্রজাতির বাঁশ পাওয়া যায়। বাঁশ গাছ সাধারণত একত্রে গুচ্ছ আকারে জন্মায়, যা ‘বাঁশ ঝাড়’ নামে পরিচিত। বাঁশ দ্রুত বর্ধনশীল উদ্ভিদগুলোর মধ্যে অন্যতম, এবং এটি পরিবেশে কার্বন শোষণের ক্ষমতাও রাখে। এ কারণে বাঁশকে পরিবেশবান্ধব উদ্ভিদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বাঁশ কেবল গৃহস্থালি পণ্য বা আসবাবপত্র তৈরিতেই ব্যবহৃত হয় না, এর উপযোগিতা আরও বিস্তৃত। বাঁশের কঞ্চি থেকে শুরু করে এর পাতাও বিভিন্ন ধরনের শিল্পে ব্যবহৃত হয়। বাঁশ দিয়ে কাগজ, কাপড়, মাটির ঘর নির্মাণ সামগ্রী, সেতু, নৌকা, বাদ্যযন্ত্র, এমনকি জ্বালানীও তৈরি হয়। এ ছাড়া, খাদ্যদ্রব্য হিসেবেও বাঁশের কচি অংশ (বাঁশ কোড়ল) অনেক অঞ্চলে জনপ্রিয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বাঁশের কচি অংশ সুস্বাদু খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
বাঁশের ব্যবহার শুধু শিল্পক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, এর চাষ এবং ব্যবস্থাপনা অনেক মানুষের জীবিকা নির্বাহের প্রধান উৎস। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বাঁশ চাষের মাধ্যমে কৃষি এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই দিবসটি পালনের প্রধান লক্ষ্য হলো বাঁশের চাষ এবং ব্যবহারের গুরুত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা। বিশ্ব বাঁশ সংস্থা প্রতিটি দেশকে উৎসাহিত করছে বাঁশের উৎপাদন বাড়াতে এবং এর টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করতে।
বিশ্ব বাঁশ দিবস পালনের মাধ্যমে বাঁশের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত গুরুত্বকে তুলে ধরা হয়। এই দিনটি বাঁশের বহুমুখী ব্যবহারের ওপর আলোচনা, কর্মশালা এবং প্রদর্শনী আয়োজনের মাধ্যমে উদযাপন করা হয়। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বাঁশের ব্যাপক উৎপাদন এবং বাণিজ্যিক ব্যবহার স্থানীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
বাংলাদেশে বাঁশ একটি বহুল ব্যবহৃত উদ্ভিদ। বাড়ির আশেপাশে, গ্রামের পথে বা জঙ্গল এলাকায় বাঁশের ঝাড় দেখা যায়। বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ঘরের বেড়া তৈরি, নৌকার হাল এবং বিভিন্ন গৃহস্থালি সরঞ্জাম তৈরি করা হয়। এ ছাড়াও, বাঁশের বিভিন্ন অংশ মাছ ধরার জাল, বাঁশি, এবং দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পণ্যের উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
তবে মজার বিষয় হলো, বাংলাদেশের সাধারণ কথ্য ভাষায় ‘বাঁশ’ শব্দটি অন্য একটি অর্থেও ব্যবহৃত হয়। কোন ব্যক্তি যখন হঠাৎ সমস্যায় পড়েন বা ঠকে যান, তখন এই শব্দটিকে নেতিবাচকভাবে ব্যবহার করা হয়। তবে বিশ্ব বাঁশ দিবসের আলোচনায় মূলত বাঁশের ইতিবাচক দিক, বিশেষ করে এর টেকসই ব্যবহারের দিকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।
বিশ্ব বাঁশ দিবস পালনের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে, বাঁশ শিল্পকে আরও উন্নত করা এবং বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বাঁশের চাষের মাধ্যমে এই শিল্পের ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখা। বিশ্ব বাঁশ সংস্থা বাঁশের গুরুত্বকে বোঝাতে এবং নতুন প্রজন্মকে বাঁশ শিল্পে সম্পৃক্ত করতে কাজ করছে। এর মাধ্যমে স্থানীয় ও বৈশ্বিক পর্যায়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনা আরও জোরদার করা সম্ভব হবে।
বিশ্ব বাঁশ দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, বাঁশ শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ নয়, এটি সামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি মাধ্যম।