বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা বাড়ছে, কারণ ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় একটি সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। এ নিয়ে আলোচনা আরও তীব্র হয়েছে, যখন সমাবেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ভারতের মাটিতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতির সম্ভাবনা উঠে আসে। ধারণা করা হচ্ছে, এই সমাবেশ থেকে প্রবাসী সরকার গঠনের ঘোষণা দেওয়া হতে পারে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবী ও রাজনৈতিক বিতর্ক
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ জানিয়েছেন, “ওই সমাবেশে আওয়ামী লীগের নেতারা প্রবাসী সরকার গঠনের ঘোষণা দিতে পারেন এবং শেখ হাসিনা নিজে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখতে পারেন।” এ ধরনের মন্তব্য দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন মহলে ব্যাপক আলোচনা চলছে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এটি ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া
তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা আগরতলায় সমাবেশ আয়োজনের বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বিবিসিকে বলেছেন, “এসব ভিত্তিহীন, অসত্য এবং প্রোপাগান্ডা ছাড়া আর কিছু নয়।” তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ভারতের মাটিতে কোনো ধরনের সমাবেশ করার কোনো পরিকল্পনা করছে না। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের ব্যর্থতা ঢাকতে এই ধরনের গুজব ছড়াচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেতা জানান, “দেশে বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নেই এবং পরিস্থিতি দিন দিন অরাজকতার দিকে যাচ্ছে। সরকার এই পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ হচ্ছে এবং নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে।”
সমাবেশের প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক উত্তেজনা
গত কয়েকদিন ধরে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও সংগঠন মাঠে নেমেছে। আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠছে বিভিন্ন গণআন্দোলনের মাধ্যমে। এর মধ্যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও জানিয়ে দিয়েছে যে তারা আওয়ামী লীগ ও এর মিত্রদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা দেবে।
তবে আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করছেন, তাদের ওপর সরকারের কঠোর দমন-পীড়ন চলছে। বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, “আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন, মামলা ও হামলা চালানো হচ্ছে। এমন অবস্থায় অনেকেই জীবন বাঁচাতে দেশের বাইরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন।”
আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনা
আগরতলায় সমাবেশ করার গুজব ও প্রবাসী সরকার গঠনের আলোচনা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ এমন কোনো পদক্ষেপ নিলে তা দেশের রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করবে। দেশের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে দলের ভবিষ্যৎ কৌশল নিয়ে আওয়ামী লীগ কীভাবে এগোবে, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
শেখ হাসিনা সত্যিই আগরতলায় সমাবেশে যোগ দেবেন কিনা বা প্রবাসী সরকার গঠনের পরিকল্পনা আদৌ বাস্তবায়িত হবে কিনা, সেটি এখনও স্পষ্ট নয়। তবে এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক এবং উত্তেজনা চলছেই।
সুত্রঃ বিবিসি বাংলা