গত ৫ আগস্ট, বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান, এবং তার পরে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। এই অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান প্রধান খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে, যা দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভবিষ্যতকে একটি নতুন পথে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, যিনি সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনার ক্ষমতা ছাড়ার কয়েক সপ্তাহ আগে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি তার পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন। বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তিনি ড. ইউনূসের পাশে আছেন এবং তার সরকারের সংস্কার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবেন। জেনারেল ওয়াকার আরও জানান, সেনাবাহিনী এই সরকারকে সমর্থন করছে এবং দেশের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। তিনি উল্লেখ করেন, তাদের লক্ষ্য আগামী ১৮ মাসের মধ্যে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে যাওয়া।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভে সেনাবাহিনী কোনো বাধা দেয়নি, যা শেখ হাসিনার ক্ষমতা থেকে পদত্যাগের পথে অন্যতম প্রধান কারণ ছিল। আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বিরোধী আন্দোলন থেকে, যা পরবর্তীতে সরকারের বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভে পরিণত হয়। সহিংস এই আন্দোলনে এক হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম রক্তক্ষয়ী ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
ড. ইউনূস সরকার গঠন করার পর বিচার বিভাগ, পুলিশ এবং আর্থিক খাতের সংস্কারে মনোনিবেশ করেছে। তার সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা এবং দেশের বিভিন্ন খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করা। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার বলেন, এই সংস্কার কাজগুলোর জন্য ধৈর্য দরকার এবং তিনি আশাবাদী যে, এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে বাংলাদেশ আবারও গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরবে।
এদিকে, দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি, অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতায় আসার তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছে। তবে জেনারেল ওয়াকার মনে করেন, গণতন্ত্রে ফেরার জন্য পর্যাপ্ত সময় নেয়া প্রয়োজন এবং সেনাবাহিনী এই সময়ে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে। বর্তমান সময়ে পুলিশের প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার সদস্যের বিশৃঙ্খল অবস্থার কারণে সেনাবাহিনীকেও দেশের বিভিন্ন জায়গায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করতে হচ্ছে।
জেনারেল ওয়াকার বলেন, ড. ইউনূস এবং তার মধ্যে খুবই ভালো সম্পর্ক রয়েছে এবং তারা প্রতি সপ্তাহে বৈঠকে মিলিত হন। তিনি আশাবাদী যে, তাদের যৌথ প্রচেষ্টার ফলে দেশকে স্থিতিশীল করা সম্ভব হবে এবং তারা সফল হবেন। সেনাবাহিনী দেশের পুনর্গঠনের কাজে সর্বাত্মক সহায়তা করবে এবং এই প্রক্রিয়া সফল করতে যা কিছু প্রয়োজন তা করবে।
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দেশের সিভিল সার্ভিসে কিছুটা অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তবে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে সংস্কার কার্যক্রমের মাধ্যমে এই অচলাবস্থা কাটিয়ে ওঠার প্রচেষ্টা চলছে।